‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ ২০১৯’-এ শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহসিনা হোসাইন। গত ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তাঁকে এ সম্মাননা প্রদান করে। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত। উচ্চতর গবেষণার জন্য তিনি সম্প্রতি পেয়েছেন ‘ইউজিসি পিএইচডি ফেলোশিপ ২০১৯’।
মোহসিনা হোসাইনের জন্ম বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলায়। তাঁর বাবা মোঃ মোজাম্মেল হোসাইন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, মা হেলেনা পারভীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। স্বামী আরাফাত শাহরিয়ার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের সহকারী পরিচালক।
মোহসিনা হোসাইন প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি লাভসহ স্কুলবেলা থেকেই মেধার স্বাক্ষর রাখেন। বাগেরহাটের শরণখোলার আরকেডিএস পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে এসএসসি ও বাগেরহাট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে আবৃত্তি, বক্তৃতা, রচনা লিখন, সাধারণ জ্ঞান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। গার্লস স্কাউট, নাট্যাভিনয়, জারিগানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়েও সুনাম অর্জন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন মোহসিনা হোসাইন। এর পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে ২০১১ সালে প্রথম শ্রেণি নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর পর্যায়েও প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় বিতার্কিক। রোকেয়া বিতর্ক অঙ্গনের সহ-সভাপতি, টিআইবির ইয়েস গ্রুপের সদস্য এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও ছিলেন সক্রিয়।
মোহসিনা হোসাইন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করার পরপরই কিছুদিন ঢাকার বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজে শিক্ষকতা করেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে বিভাগে ছ্ত্রা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন ২ বছর। সহকারী অধ্যাপক হওয়ার পর বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন ২০১৮ সালের জুলাই থেকে এক বছর। এরপর তিনি শিক্ষাছুটি নিয়ে পিএইচডি গবেষণা শুরু করেন।
দৈনিক প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, সমকাল, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা, বেকারত্ব সমস্যা, নারী ও শিশু অধিকার প্রভৃতি নানা বিষয়ে কলাম ও ফিচার লিখে চলেছেন। টিআইবি আয়োজিত দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিতর্কসহ অনেক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দৈনিক প্রথম আলো আয়োজিত ভাষা প্রতিযোগে বরিশাল আঞ্চলিক পর্যায়ে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ‘চ্যানেল আই’ এর ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক টেলিভিশন রিয়েলিটি শো ‘বাংলাবিদ’ এর বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ বেতার বরিশাল কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষকতাকে কেবল পেশা নয়, গ্রহণ করেছেন ব্রত হিসেবেও। নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে। ক্লাসে পড়ানোর পাশাপাশি ক্লাসরুমের বাইরে শিক্ষার্থীদেরকে নিজের জীবনকে বদলানোর মাধ্যমে সমাজকে বদলে দিতে উৎসাহিত করেন তিনি।
মোহসিনা হোসাইন বলেন, ‘প্রত্যেক নারীই তাঁর নিজ জীবনপথে একেকজন জয়িতা। তবুও বলব, জয়িতা সম্মাননা প্রাপ্তি সমাজ ও দেশের প্রতি কর্তব্য পালনে আমাকে আরো উৎসাহিত করবে। আমাদের সমাজের বাস্তবতায় একজন কন্যা সন্তানের আত্মনির্ভরশীল হওয়াটা একজন পুত্র সন্তানের চেয়েও বেশি দরকার। অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার।’