বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

দিল্লির মসনদে তৃতীয়বার কেজরিওয়াল

দিল্লির মসনদে তৃতীয়বার কেজরিওয়াল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয় পেয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। এর মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন কেজরিওয়াল। তিনি ঝাড়ূ হাতে খেলেছেন ঝড়ো ইনিংস। তাতেই উড়ে গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির গেরুয়া শিবির। আর কংগ্রেসের নামনিশানাই খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরপর দু’বার নিজেদের নাক কাটা গেলেও বিজেপির হার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসকে।

দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনের ৬২টিতে জয় পেয়েছে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। গতবারের চেয়ে পাঁচটি আসন কম পেয়েছে। তার পরও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগষ্ঠিতা অর্জন করেছে। সরকার গঠন করতে যেখানে ৩৬ আসন প্রয়োজন, কেজরিওয়ালরা সেখানে ৬২ আসনে জয় পেয়েছেন। এ এক বিশাল জয়। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেন খড়কুটোর মতো উড়ে গেলেন কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তার হাওয়ায়।

শনিবার ভোটের পর বুথফেরত জরিপে বিজেপির অন্তত ১৮টি আসন পাওয়ার আভাস মিলেছিল। সে পূর্বানুমান ভুল হলো। মাত্র আটটি আসন পেয়েছে তারা। অবশ্য গতবারের চেয়ে তা পাঁচটি বেশি। তবে এবার বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা গতবারের চেয়ে বেশি। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে কোনো আসন না পাওয়া কংগ্রেস ২০১৫ সালের চেয়েও কম ভোট পেয়েছে। এবার তাদের ঝুলিতে ৪ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে।

মঙ্গলবার ভোটের ফল প্রকাশের পর উৎসবে মেতে ওঠেন আম আদমির নেতাকর্মীরা। নেচে-গেয়ে উল্লাস করেছেন তারা। পাঞ্জাবের অমৃতসরেও উল্লাস করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে সুনসান নীরবতা ছিল দিল্লিতে বিজেপির কার্যালয়ে। মহারাষ্ট্রের মতো নতুন ‘গেম’ খেলার সুযোগ না পেয়ে তাই ‘শোক পালন’ করেছে গেরুয়া শিবির। সকালে ফল প্রকাশের শুরুর দিকে অবশ্য বেশকিছু আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলটি একটি ব্যানার টানিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ছবি সংবলিত সেই পোস্টারে লেখা ছিল- ‘জয় আমাদের অহংকারী করে না, হার আমাদের হতাশ করে না’। বিজেপির নেতাকর্মীরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ‘দৈব’ কিছু ঘটার আশায় ছিলেন।

বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে বিজয় ভাষণ দেন কেজরিওয়াল। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই জয় মানুষের জয়। কাজে বিশ্বাস রেখে ভোট দিয়েছেন সবাই। নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা হলো।’ তৃতীয়বারের মতো আম আদমি পার্টির ওপর ভরসা রাখার জন্য দিল্লির মানুষকে ধন্যবাদ দেন তিনি।

কেজরিওয়াল বলেন, ‘দারুণ কাজ করে দেখিয়েছেন দিল্লিবাসী। আমি আপনাদের খুব ভালোবাসি।’ এ সময় দিল্লির ওপর দেবতা হনুমানের আশীর্বাদের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। দলের নেতাকর্মীরা ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দেন। আম আদমির নেতাকর্মীদের অবশ্য অতীতে এ স্লোগান দিতে শোনা যায়নি। পরে স্থানীয় একটি হনুমান মন্দিরে পূজা দিতে যান কেজরিওয়াল।

জয়ের আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেন অন্য দলের শীর্ষ নেতারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটে লিখেছেন, ‌‘আম আদমি পার্টি ও কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন। আশা করি, দিল্লির মানুষের প্রত্যাশা পূরণে তারা উল্লেখযোগ্য কাজ করবেন।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মমতা বলেছেন, ‘মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি এসব মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।’

কংগ্রেসের টুইটার পেজে লেখা হয়েছে, ‘আমরা হেরেছি কিন্তু পরাজিত হইনি।’ তবে তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় কেজরিওয়াল ও তার দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী।

দিল্লি বিজেপির নেতা মনোজ তিওয়ারি পরাজয় মেনে নিয়ে কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আম আদমি সরকার দিল্লির মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। এই মনোজ তিওয়ারিই ভোটের দিন বুথফেরত জরিপে আম আদমির জয়ের পূর্বাভাস দেখে বলেছিলেন, ফল মিথ্যা প্রমাণিত হবে। বিজেপি জিতবে ৪৮ আসনে। শেষ পর্যন্ত তার দাবিই ভুল প্রমাণিত হলো।

এবার দিল্লির নির্বাচনে কেজরিওয়ালকে অনেক বেশি কৌশলী হতে দেখা গেছে। বিজেপির পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে নগরবাসীর উন্নয়নে গৃহীত কাজকেই নির্বাচনী প্রচারের হাতিয়ার করেছেন তিনি। পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন, নারীদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাদের জন্য বাসভাড়া মওকুফ করা- এসব ফ্যাক্টর দিল্লিবাসীর মন জয় করেছে। তবে তাকে একই সঙ্গে লড়তে হয়েছে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের মতো বাঘা জুটির বিরুদ্ধে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের প্রচারের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়েছে তাকে। সেই সঙ্গে ধর্মের ধুয়া তুলে হিন্দু ভোটারদের বিজেপি যেভাবে এক করতে চেয়েছে, তাও সামলাতে হয়েছে দক্ষ হাতে।

সব মিলে ঝড় তোলা ইনিংস খেলেই বিজেপিকে হারালেন কেজরিওয়াল। আর আম আদমির প্রতীক ঝাড়ূর তোড়ে উড়ে গেল বিজেপির পদ্ম। এর মধ্য দিয়ে ভারতের রাজনীতিতে নতুন ধারা শুরু হলো বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা। শুধু বক্তব্য বেচে ভোট কেনার দিন হয়তো ফুরিয়ে আসছে। দিল্লির নির্বাচন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech