বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

ঝালকাঠিতে কিস্তি পরিশোধে চাপ দিচ্ছে এনজিও

ঝালকাঠিতে কিস্তি পরিশোধে চাপ দিচ্ছে এনজিও

করোনাভাইরাসের কারণে জীবনের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। গত কয়েক মাস কোনো আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকেই। বিশেষ করে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। এ অবস্থায় তাদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে এনজিওর ঋণের কিস্তি। এই দুঃসময়েও এনজিওগুলো কিস্তির টাকার জন্য চাপাচাপি করছে।

এনজিওকর্মীদের বিরুদ্ধে ঋণগ্রহীতাদের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ সরকার এই সঙ্কটকালে এনজিওগুলোকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সব ধরনের কিস্তি আদায় পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বলেছে। তারপরও এনজিওগুলোর এই তৎপরতায় মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ রাজিয়া বেগম। তিনি জানান, পাঁচ মাস আগে গত জানুয়ারি মাসে মাসিক কিস্তিতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার ঋণ নেন। তিনটি কিস্তি পরিশোধ করার পরেই মহামারি করোনা দুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামী আইনজীবী সহকারী মো. শাহজাহান। এপ্রিল ও মে মাসে ঋণের কিস্তির জন্য চাপ না দিলেও জুন মাসের কয়েকদিন গেলেই তাকে অফিসে গিয়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য মুঠোফোনে কল দিয়ে চাপ দেন সংশ্লিষ্ট কিস্তি গ্রহীতা গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়োজিত অফিসার। এতে তিনি কিস্তি দিতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তাদের চাপ ও এক ধরনের হুমকিতে বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিস্তি পরিশোধের জন্য ঋণ নিয়েছেন।

অপরদিকে রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের খালেদা আক্তার জানান, গত বছর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন কিস্তিতে পরিশোধের জন্য। মাসিক কিস্তি হিসেবে ৪৪ কিস্তিতে গ্রামীণ ব্যাংকের লভ্যাংশসহ পরিশোধের শর্তে এ ঋণ নেন তিনি। ইতিমধ্যে ১০ কিস্তি পরিশোধ করেছেন। মার্চ মাসে দেশব্যাপী মহামারি করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সরকারি নির্দেশনায় কিস্তি নেয়া স্থগিত হয়। জুন মাসের ১০ দিন যেতে না যেতেই গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ফোন করে তাকে জুন মাসের কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

তিনি বলেন, স্বামীর ব্যবসার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। যার ১০টি কিস্তি পরিশোধ করেছি। এর মধ্যে মার্চ মাসের কিস্তিও পরিশোধ করা হয়েছে। মার্চ মাসের মাঝখানে সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়লে আমার স্বামীর মাছ ব্যবসায় ধস নামে। প্রতিমাসেই তার মোটা অংকের লোকসান হচ্ছে। সন্তানদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনই কষ্টকর হচ্ছে।

খালেদা আক্তার বলেন, কয়েকদিন আগে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ফোন দিয়ে আমাকে কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। এই মুহূর্তে কিস্তি পরিশোধ করার মতো আর্থিক অবস্থা নেই। তাই তাদেরকে বলেছি সরকার কিস্তি পরিশোধের জন্য স্বাভাবিক সময় ঘোষণা করলে এবং আমার স্বামীর ব্যবসা স্বাভাবিক হলে তখন থেকে কিস্তি দিতে পারবো। বর্তমানে কিস্তি দেয়া সম্ভব নয়।

খালেদা বেগমের প্রতিবেশী ও তার নিকট আত্মীয় রিনা আক্তার বলেন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম বছর খানেক আগে। যার ১২টি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে (মার্চ মাস পর্যন্ত)। কয়েকদিন আগে ব্র্যাকের কিস্তি আদায়কারী কর্মকর্তা ফোন দিয়ে অফিসে গিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে বলেন। আমার স্বামী মালয়েশিয়া থাকেন। সেখানে করোনার কারণে গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। তার কোনো আয়-ইনকাম নেই। সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। এমন সময়ে কিভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবো?

জানা গেছে, এলাকার বহু অসহায় নারী-পুরুষ কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন। সরকার লকডাউন তুলে নিয়েছে এমন খবরের পরপরই কর্মহীন ঘরবন্দী মানুষের মাথার ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখির পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে কিছু দিন কিস্তি আদায় বন্ধ রাখলেও জুনের শুরুতে সরকারি ছুটি উঠিয়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনজিওগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে কিস্তি আদায়ের জন্য। তারা তাদের মাঠকর্মীদের ঋণের টাকা আদায়ের জন্য মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। আর মাঠকর্মীরাও চাকরি বাঁচাতে কিস্তির টাকার জন্য গ্রাহকদের নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন এবং নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

রিকশাচালক মোস্তাহিদ মিয়া বলেন, এই ক্রান্তিকালেও প্রতি সপ্তাহে এক হাজার টাকা করে এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। বর্তমানে আয় নেই। তাই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে নিয়মিত এনজিওর কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করব, তা বুঝতে পারছি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিওকর্মী বলেন, অফিস খেলার সঙ্গে সঙ্গেই ম্যানেজার কিস্তির টাকা নেয়ার জন্য বলেছেন। এ কারণে আমরা কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য এনজিওর সদস্যদের চাপ দিতে বাধ্য হচ্ছি।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের জেলা ম্যানেজার আব্দুস সামাদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমরা যে নির্দেশনা পেয়েছি তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে জোর করে কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করা যাবে না। তবে ১০ মে থেকে স্বল্পপরিসরে সীমিত আকারে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। এ জন্য যাদের কিস্তি শেষের দিকে তারা ২-১টি কিস্তি পরিশোধ করলেই ঋণ পরিশোধ করা হয়ে যাচ্ছে। গ্রাহক নিজের ইচ্ছায় দিতে চাইলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ২০ শতাংশ গ্রাহকের কাছ থেকেও কিস্তির টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech