বিয়ে মানেই অনেকটা দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা আরও অনেককিছু। দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য অনেকরকম ত্যাগের প্রয়োজন পড়ে। সবচেয়ে যেটি বেশি প্রয়োজন পড়ে, তা হলো ভালোবাসা। কারণ এটি কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি নয়। দু’জন মানুষের বিশ্বাস আর ভালোবাসায়ই গড়ে ওঠে সংসার। তবু নানা কারণে পরস্পরের প্রতি টান কিংবা আকর্ষণ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমতে পারে ভালোবাসাও। কমতে কমতে একসময় তা একেবারেই নাই হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও সামাজিক কিংবা আর্থিক কারণে সেই সম্পর্ক চালিয়ে নিতে বাধ্য হন অনেকে। কখনো বা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নীরবে সব সয়ে যান। কখনোবা সব ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তা কতটুকু যৌক্তিক? জেনে নিন-
দূর ভবিষ্যতের কথা ভাবুন: দিনের পর দিন ভালোবাসাহীন, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিহীন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মানে নেই অনেকের কাছেই। এটি ভুল ভাবনাও নয়। কিন্তু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোনোভাবে যদি সাময়িক ঝড়ঝাপটা, মতের অমিল সহ্য করে দাম্পত্য সম্পর্কে থেকে যাওয়া যায়, তাহলে দূর ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নতও হতে পারে। সন্তানের জন্মের পর যেসব দম্পতির জীবনে উথ্থান-পতন আসে, তাদের ক্ষেত্রে একথা বেশি করে প্রযোজ্য।
শারীরিক-মানসিক অত্যাচার: নানা দায়বদ্ধতার কারণে বিবাহিত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন অনেকেই। কিন্তু সেটি যদি ভয়ের কারণে হয়, তাহলে আরেকবার ভেবে দেখুন। স্বামীকে যদি আপনি ভয় পান, তিনি যদি আপনার উপর শারীরিক অত্যাচার করেন, তাহলে সেই বিয়ের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবেন না। সাহস সঞ্চয় করুন, প্রথম সুযোগেই বেরিয়ে আসুন দাম্পত্য সম্পর্ক থেকে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আর মানসিক শান্তি আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।
শারীরিক সম্পর্ক না থাকলে: দিনের পর দিন যৌন সম্পর্ক নেই স্বামীর সঙ্গে? সেক্ষেত্রে কোনোরকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে স্বামীর সঙ্গে বসে কথা বলুন। প্রয়োজনে কাপল কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলে যৌনজীবন স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। যদি চেষ্টা করেও সম্পর্কের উন্নতি না হয়, তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।
মানসিক ব্যবধান: সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে আপনি যতটা চেষ্টা করছেন, স্বামীর দিক থেকে ততটা তাগিদ দেখা যাচ্ছে না? কাউকে জোর করে সম্পর্কে ধরে রাখা যায় না এটা ঠিক, কিন্তু ইগো সরিয়ে রেখে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখতেই বা ক্ষতি কী? প্রয়োজনে রিলেশনশিপ কাউন্সেলরের সাহায্য নিন, কিন্তু মাথায় রাখবেন স্বামী যদি সম্পূর্ণভাবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, তাহলে কাজ নাও হতে পারে।
তিক্ত সম্পর্ক: ঝগড়া সব দম্পতির ভেতরেই কম-বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু আপনাদের ঝগড়া কি মাত্রা অতিক্রম করে প্রতিবারই? নিজের রাগটাকে কি সংযত করতে পারেন না আপনারা? ঝগড়া থেমে গেলে, মেজাজ শান্ত হওয়ার পর স্বামীর প্রতি আপনার অনুভূতিটা কেমন, সেটাও ভেবে দেখুন। যদি মনে হয় ভুল বোঝাবুঝিটা মিটিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়, তা হলে সম্পর্কটা বাঁচিয়ে রাখার আশা আছে। কিন্তু যদি চরম হতাশ লাগে, যদি মুক্তির জন্য হাঁফিয়ে ওঠে মন, তা হলে এ সম্পর্কের আর উন্নতি সম্ভব নয়।