ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে হামলা ও সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে ‘ধিক্কার দিবস’ পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এ উপলক্ষে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৩ সালের এই দিনে তৎকালীন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও সাংবাদিকদের মারধর করে। এর পর থেকেই দিনটিকে ঝালকাঠির সাংবাদিকরা ধিক্কার দিবস হিসেবে পালন করছেন। প্রেস ক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দত্তের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস সিকদার, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহাসহ সদস্যরা বক্তব্য দেন।
প্রসঙ্গত ২০০৩ সালে ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের ঘণিষ্ট এক নেতার বিরুদ্ধে বরিশালের একটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ক্যাডাররা সাংবাদিক মো. হুমায়ুন কবিরকে ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই বছরের এ দিনে (৮ ডিসেম্বর) সাংবাদিকরা মৌনমিছিল ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি নিলে বিএনপির একটি গ্রুপ পুলিশের উপস্থিতিতে ঝালকাঠি প্রেস ক্লাব এবং বরিশালের সাংবাদিকদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাসে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। এ সময় ঝালকাঠি ও বরিশালের ৭ জন সাংবাদিক আহত হন। ওই গ্রুপটি পরে দৈনিক শতকণ্ঠ অফিস এবং কয়েকজন সাংবাদিকের বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালায়। তারা রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসায় এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সাংবাদিকদের খুঁজতে থাকে। শহরে মাইকিং করে কয়েকজন সাংবাদিককে অবাঞ্চিতও ঘোষণা করা হয়। পরে তারা ১০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মিছিলে হামলা করার মিথ্যা অভিযোগ এনে থানায় উল্টো মামলা দায়ের করে। বিএনপি ক্যাডারদের পাশাপাশি পুলিশও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা শহর ছেড়ে পালিয়ে ঢাকা চলে যেতে বাধ্য হন। দেশজুড়ে এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে এ ঘটনায় নিন্দা আসতে থাকে। জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোও এ নিয়ে সোচ্ছার হয়। সংশি¬ষ্ট সাংবাদিকরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। অবশেষে টনক নড়ে সরকারের। স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি ফয়সালা করার উদ্যোগ নেয়। উপযুক্ত বিচারের আশ্বাসে সাংবাদিকরা ঝালকাঠিতে ফিরে আসলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রেস ক্লাবে হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আসামী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম হাই কোর্টর নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।