বিনোদন ডেস্ক:
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন [এফডিসি] এখন সরগরম। সিনেমার শুটিং না থাকলেও প্রতিদিনই বিভিন্ন তারকা আসছেন। কারণ, ২০১৯-২১ মেয়াদি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ অক্টোবর। নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, তত বিতর্কও বাড়ছে শিল্পী সমিতির গত মেয়াদের কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে। তার মধ্যে অন্যতম সমিতির সদস্য যোগ-বিয়োগে অসচ্ছতা। শিল্পী সমিতির গত মেয়াদে নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৬২৪ জন। পরে খসড়া থেকে বাদ পড়া ও নতুন মিলে প্রায় ১৮১ জনকে সহযোগী সদস্য করা হয়েছে, যারা এবার ভোট দিতে পারবেন না। তাদের মধ্যে পাঁচটি ছবিতে অভিনয় না করাতে অনেক নায়িকারও ভোটাধিকার খর্ব করা হয়েছে। আবার প্রায় ১৯ জনকে করা হয়েছে নতুন ভোটার, যাদের অধিকাংশকে নিয়মের বাইরে গিয়েই সদস্য করা হয়েছে। তাদের অনেকের আবার পাঁচটি ছবি হয়নি। একই সমিতির দ্বিমুখী আচরণের কারণ দিয়েই যেন শুরু হয় মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেলের বিতর্ক, যা বাড়ছে ক্রমেই। যদিও এ বিতর্কের জবাব দিয়ে মিশা-জায়েদ বলেছেন, তারা নিয়মের বাইরে কিছুই করেননি। ভোটাধিকার হালনাগাদ করতে গিয়ে কিছু যোগ্য সদস্যও হয়তো বাদ পড়েছেন। সেজন্য ক্ষমাও চান তারা।
এদিকে ২০১৭ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান ক্ষমতায় আসার পর গেল দুই বছর ভালোমন্দেই কেটেছে তাদের। বেশ কিছু ইতিবাচক কাজ দিয়ে যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি অনেক কার্যক্রম তাদের তুলেছে অভিযোগের কাঠগড়ায়। সমিতির আয়-ব্যয়ের যে হিসাব, সেখানেও রয়েছে গণ্ডগোল। এসব নিয়ে কাউকে মুখ খুলতে দেন না সভাপতি ও সেক্রেটারি। প্রসঙ্গ এলেই নানা টালবাহানায় এড়িয়ে যান বলে দাবি করেছেন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস। এ ছাড়া শিল্পী সমিতিতে জায়েদ খান নিজের ব্যক্তিগত কাজেই মূলত ব্যবহার করছেন বলে দাবি এ নায়কের। মিশা-জায়েদ কমিটি জয়ী হওয়ার পর সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিবছর একবার বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও গত বছর তা হয়নি। গত ৪ অক্টোবর বিএফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে দুই বছরের সভা একসঙ্গে আয়োজন করা হয়। এই সভা নিয়েও ওঠে বিতর্ক। এখানে দুই বছরের আয়-ব্যয়সহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নানা কার্যক্রম তুলে ধরা হলেও সে আয়-ব্যয় নিয়ে কমিটির গত মেয়াদের সহসভাপতি অভিনেতা রিয়াজকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জায়েদ খান। নিয়মের বাইরে কোনো কাজ কমিটি করেনি বলেই দাবি তার।
উল্টো জায়েদ খান রিয়াজ,ফেরদৌস ও পপির নামে শিল্পী সতিতির অসহায় শিল্পীদের জন্য ফান্ড গঠনের স্টেজ শো’তেও টাকা নিয়েছেন বলে দাবী করেছেন। জায়েদ খান বলেন, ‘নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কে একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম। ওই টাকায় আর্থিক অস্বচ্ছল শিল্পীদের জন্য ৮ লাখ টাকার ফান্ড করেছিলাম কল্যাণ ফান্ডে রাখার জন্য। সেখানে যেতে বিনা পারিশ্রমিকে কেউ কাজ করতে রাজি হয়নি। সেখানে থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে কমিটির সদস্য ফেরদৌস, পপি, সহ-সভাপতি রিয়াজ। তারা প্রত্যেকেই কল্যাণ ফান্ড গঠনের আয়োজন থেকেও ৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন।’
তবে জায়েদ খানের এমন দাবীর সরাসরি মিথ্যচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রিয়াজ, ফেরদৌস এবং পপি তিনজনই। তারা বলছেন, জায়েদ খান মিথ্যাচার করছেন। সঙ্গে প্রশ্নও রেখেছেন আমরা কী ৫০ হাজার টাকা নেয়ার আর্টিস্ট?
এসব নানা কারণেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে বাড়ছে বিতর্ক। সবমিলিয়ে বিতর্ক নিয়েই হয়তো ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। আসবে নতুন নেতৃত্ব। যদিও এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে না। নির্বাচনে ১৮ পদে লড়বেন মাত্র ২৭ জন। তার মধ্যে অনেকে আবার এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে বসে আছেন!