স্টাফ রিপোর্টার: ধীর গতিতে হলেও নারীর মাসিক বা পিরিয়ডে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলেও। নারীর সুস্বাস্থ্যের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের গুরুত্ব অপরিসীম। স্যানিটারি ন্যাপকিন একটা সময়ে ব্যবহার কম ছিলো কিন্তু বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার প্রচারণা ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়ছে। এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু কোম্পানি অস্বাস্থ্যকর ন্যাপকিন তৈরি করে মার্কেটে ছেড়ে দিছে ফলে অস্বাস্থ্যকর স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে ঘটছে নানা বিপত্তি ও নারী স্বাস্থ্য, বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পিরিয়ড বা মাসিকের সময়ে পরিচ্ছন্নতা বা নিরাপদ ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে নানা রকম অসুখবিসুখও হচ্ছে। এমনি এক “নিরাময়ী স্যানিটারি ন্যাপকিন ” নামে অবৈধ ভুয়া নাম কোম্পানির সন্ধান মিলে বরিশাল নগরীর বেলতলা চরআবদানীতে সেখানে তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নারীদের মাসিকের সময়ে ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন। নিরাময়ী স্যানিটারি ন্যাপকিন গুলো
তুলা, টিস্যু ও গজ দিয়ে তৈরি হয় তা কোনো জীবাণু মুক্ত করা হয় না, যার ফলে এসব প্যাড ব্যবহারেও স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যায় নারীদের। কিন্তু তাদের মোড়কে উল্লেখ করা আছে যে অটোক্লেভ মেশিন দ্বারা ১০০% জীবাণু মুক্ত করা কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় কারখানায় জীবাণু মুক্তকর কোন মেশিন পাওয়া যায়নি। অস্বাস্থ্যকর এবং নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন। প্রতারণার এখানেই শেষ নয় নিরাময়ী স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি হচ্ছে বরিশালে বসে কিন্তু তাদের মোড়কের গায়ে ঠিকানা দেওয়া ঢাকা, বাংলাদেশ।
কোম্পানির বৈধতার কোন কাগজপত্র নেই, অবৈধ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা ব্যবসা। ট্রেডলাইন্সেস, পরিবেশে সনদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানুফ্যকচারিং সনদ ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সনদ, মান যাচাই-বাছাই সনদসহ কোন বৈদতার কাজগ পত্র নেই।
নিরাময়ী স্যানিটারি ন্যাপকিনের মালিক নাছির উদ্দীনকে তার অবৈধ ভুয়া কোম্পানিতে কেন সে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নারী প্রজনন স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কেন তৈরি করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেন জিগ্যেস করলে কোন সঠিক কোন জবাব দিতে পারেননি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারী স্বাস্থ্য, বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পিরিয়ড বা মাসিকের সময়ে পরিচ্ছন্নতা বা নিরাপদ ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে নানা রকম অসুখবিসুখও হচ্ছে। পিরিয়ডের সময় অস্বাস্থ্যকর প্যাড ব্যবহারে নারীর জরায়ু মুখের ত্বকে নানা সমস্যা ছাড়াও হতে পারে জরায়ু সংক্রমণও। চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম মোর্শেদ বলেন, অস্বাস্থ্যকর প্যাড অনেকক্ষণ পরে থাকলে দুর্গন্ধ হয়। রক্ত অনেকক্ষণ আবদ্ধ থাকায় পচনের সৃষ্টি হয় এবং এর থেকে সংক্রমণ দেখা দেয়। এই সংক্রমণ জরায়ু পর্যন্তও বিস্তৃত হয়। “স্যানিটারি ন্যাপকিন খোলা রেখে দিলে অথবা ধুলামুক্তভাবে সংরক্ষণ না করা হলে পিরিয়ডে ওই ন্যাপকিন পরার পর অনেকেরই অস্বস্তি ও চুলকানি দেখা দিতে পারে,” বলেন তিনি। শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (অব) ডা. সেলিনা পারভিন বলেন, মাসিকের সময়ে অস্বাস্থ্যকর ন্যাপকিন ব্যবহার করলে জীবাণু যোনিপথে উপরের দিকে উঠে যায়, সাথে সাথেই কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা না দিলেও ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পায়। অনেকের দীর্ঘ মেয়াদী তলপেট ব্যথা হয়ে থাকে। এ ধরনের সংক্রমণে নারীর গর্ভধারণেও ঝুঁকি থাকে।