ভোলা ॥ ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রৌদ্রের হাট বাজারে দলীয় পার্টি অফিসে আ’লীগ ও যুবলীগের সাথে সংঘর্ষের মূল কারণ কি? কার ইন্ধনে হয়েছিলো রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষ? স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উপস্থিতিতে দুই পক্ষ কিভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে? রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অদৃশ্য ব্যক্তি কে? সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি ছড়িয়ে পড়লে এই নিয়ে নানান গুঞ্জন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মী সহ সবার মাঝে।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হলেও বর্তমানে মামুন গ্রুপের ২ জন সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রৌদ্রের হাট বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, গত ১৭ নভেম্বর রাজাপুর ইউনিয়নে জুয়া (তাস) খেলা নিয়ে পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ০১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোঃ মামুন ও রাজাপুর ইউনিয়নের ০৬নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুল খালেক হোসেনের ভাই মোঃ হারুনের সাথে তর্কবিতর্ক হয়। এই সূত্র ধরে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খাঁ স্থানীয় বাজার রৌদ্রের হাটের পার্টি অফিসে উভয় পক্ষকে নিয়ে সালিশি বৈঠকে বসেন। বৈঠকের এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্কবির্তক থেকে সংঘর্ষ বাঁধে। আর এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থুলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোঃ মামুন বেপারী সংঘর্ষের ঘটনা দাবি করে বলেন, ১৭ নভেম্বরের ঘটনা নিয়ে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খাঁ আমাকে রৌদ্রের হাট বাজারের পার্টি অফিসে আসতে বলে। তখন আমি পার্টি অফিসে এসে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বাচ্চু মাঝি ও ফারুক পিছন থেকে আমাকে লাথি মারে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আব্দুল খালেক, হারুন, রবিউদ্দিন সহ আরো ৭-১০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচতে আমি আমার বাবা ও ভাই বাড়ির দিকে দৌঁড়ে পালালে তারা আমাদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আমাদের বেপারী বাড়ির লোকজনের উপর তারা হামলা চালায়। হামলায় আমির হোসেন (৫০), সিরাজ (৫০), বাচ্চু (৩৫), জহির (৩৫) সহ ৭-১০ জন আহত হয়।
মামুন আরো জানান, মিজানুর রহমান চেয়ারম্যানের ইন্ধনে খালেক গ্যাং গ্রুপ এমন অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। খালেক গ্যাং গ্রুপ চেয়ারম্যানের ই আশ্রয়দাতা।
চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খাঁ বলেন, দুই পক্ষের কোন পক্ষই আমার কথা শোনেননি। কেউই আমার আশ্রয়দাতা নয়। হঠাৎ সংঘর্ষের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পেরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেইদিনের সংঘর্ষের ছবি ভাইরাল হলে বেড়িয়ে আসে নানান গুঞ্জন। প্রশ্ন জাগে কার আশ্রয়ে জনপ্রতিনিধির সামনে সংঘর্ষ বাঁধে? কে বা দিয়েছিলো ইন্ধন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রৌদ্রের হাট বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, শুধু জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে নয়, বরং পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই খালেক গ্রুপ হামলা চালায় মামুন বেপারী গ্রুপের উপর। যা পূর্ব পরিকল্পিত।
তিনি জানান, জুয়া খেলা নিয়ে যেদিন তর্কবিতর্ক হয়৷ সেইদিন থেকেই খালেক গ্রুপ সুযোগ চেয়েছিলো কিভাবে মারপিট করা যায়। খালেক গ্রুপ মারপিট করতে চেয়েছিলো শুক্রবার রাতেই। কিন্তু বেপারী গ্রুপের তেমন কাউকে না পেয়ে মারপিট করতে পারেনি। রাত ১২টা পর্যন্তু খালেক গ্রুপ মামুন বেপারী গ্রুপকে মারতে রৌদ্রের হাট বাজারে তান্ডব চালিয়েছিলো। শুক্রবার রাতে মারপিট করতে না পেরে শনিবার সকালে চেয়ারম্যানের সামনেই সামান্য তর্কবিতর্ক নিয়ে খালেক গ্রুপ সংঘর্ষ বাঁধে মামুন গ্রুপের উপর।
ব্যবসায়ী আরো জানান, আগের থেকেই খালেক গ্রুপের লোকজন খালেকের নেতৃত্বে বাঁশের লাঠি সহ দেশীয় অস্ত্র ঠিক করে রাখেন। যা আমার দোকানে বসেই আলোচনা করেন খালেক গ্রুপের লোকজন।
এই ঘটনায় ভোলা জজ কোর্টে ৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন মামুন গ্রুপের আহত এক সদস্য।
তবে ভাইরাল হওয়া ছবির প্রসঙ্গে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খাঁ জানান, উভয় পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোন মামলা হয়েছে কিনা জানিনা। বর্তমানে রৌদ্রের হাট শান্ত রয়েছে।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ এনায়েত হোসেন জানান, এক পক্ষ ভোলা জজ কোর্টে মামলা করছে। এবং উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছে। কেউ মামলা করতে আসলে আমরা মামলা নিব।