বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

নিকোলা টেসলা : হারিয়ে যাওয়া জিনিয়াস

নিকোলা টেসলা : হারিয়ে যাওয়া জিনিয়াস

বিনোদন ডেস্ক :
বিশ্ব সেরা বিজ্ঞানীদের কথা মনে হলেই যাদের নাম প্রথমে আপনার মাথায় আসে তারা হলেন হেনরি ফোর্ড, রাইট ব্রাদারস, টমাস এডিসন, আইনস্টাইন। এর বাইরেও একটি নাম আছে, সচরাচর যার কথা কেউ মনে রাখে না। অনেকে হয়তো না-জেনেই তার আবিষ্কারের অনেক কিছু ব্যবহার করছেন। যেমন, দৈনন্দিন জীবনে যখন মোবাইল ফোনটি চার্জ দিচ্ছেন, লাইট অন করছেন, জেনারেটর কিংবা ফ্রিজ ব্যবহার করছেন, তখন একজন বিজ্ঞানীকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। আর তিনি হলেন হারিয়ে যাওয়া জিনিয়াস নিকোলা টেসলা।

সময়টা বিশ শতকের প্রায় মাঝামাঝি, ১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি। হোটেল নিউইয়র্কারে এলিস মোনাঘান নামে এক পরিচারিকা ৩৩২৭ নম্বর রুমে যান। যদিও রুমের বাইরে টাঙানো ছিল ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব’ সতর্কবাণী, কিন্তু সেটি উপেক্ষা করেই কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। ঘরে ঢুকে দেখেন  ৮৬ বছর বয়সী এক লোকের মরদেহ পড়ে আছে। এভাবেই নিঃসঙ্গ অবস্থায় সবার অগোচরে একটি সাধারণ হোটেলের নির্জন কক্ষে শেষ হয় বিশ শতকের অন্যতম সেরা উদ্ভাবক আধুনিক যুগের প্রমিথিউস নিকোলা টেসলার জীবন। চিকিৎসকদের ধারণা, তার মৃত্যুর কারণ করোনারি থ্রম্বোসিস।

মারা যাওয়ার আগে টেসলা প্রতিদিনই সময় করে পার্কে বেড়াতে যেতেন এবং সেখানে কবুতরদের খাবার দিতেন। কোনো আহত কবুতর পেলে তিনি তার চিকিৎসা ও সেবাযত্ন করতেন। এটা তার কাছে একধরনের অবসেশনের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ৮১ বছর বয়সী টেসলা ১৯৩৭ সালে গভীর রাতে পার্কে কবুতরদের খাবার দিতে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন এবং তার কোমর ও পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়। কিন্তু তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে অস্বীকার করেন, এ আঘাত থেকে তিনি আর কখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। আর এ ঘটনার ছয় বছর পর ১৯৪৩ মারা যান তিনি। মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন, অসুস্থ, অসহায়, দরিদ্র এবং উপেক্ষিত।

টেসলা জন্মেছিলেন ১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই। তৎকালীন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে, স্মিলিয়ানে। অর্থাৎ, বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার স্মিলিয়ান শহরে। টেসলার কর্মকাণ্ডে বিস্মিত হয়ে কেউ কেউ বলতেন, টেসলা হচ্ছেন এলিয়েন শিশু। তার জন্মের সময়ও অনেকে তাকে ‘সময়ের কাল’ বলত। কিন্তু তার মা বলতেন, টেসলা পৃথিবীতে আলো নিয়ে আসবেন। মায়ের সেই কথা অবশ্য বিফলে যায়নি।

কেননা, মানুষ যখন বিদ্যুৎকে একটি রহস্য মনে করে ভয় পেত, তখন তিনি বিদ্যুৎকে হাতের তালুর মতো নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। পৃথিবীতে টেসলাই প্রথম শুরু করেছিলেন সহজলভ্য বিদ্যুৎশক্তির যুগ, যার উদ্ভাবিত এসি জেনারেটর ও মোটরের শক্তি দিয়ে শুরু হয় ব্যাপক শিল্পোৎপাদন। তার হাত ধরেই শুরু হয়েছে রোবট ও অটোমেশনের যুগ, যা মানুষের কায়িক শ্রম কমিয়ে মেশিনকে মানুষের দাসে পরিণত করেছে। মার্কনির বেতার প্রযুক্তি আবিষ্কারের কয়েক বছর আগেই তিনি পৃথিবীকে একই প্রযুক্তি উপহার দিয়েছেন। তিনি আমাদের দিয়েছেন নিয়ন ও অন্যান্য গ্যাসের টিউবলাইট, ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব, হাই ফ্রিকোয়েন্সি বিদ্যুৎ। ফলে সম্ভব হয়েছে শিল্প ও চিকিৎসা জগতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের ব্যবহার। সময়ের অনেক আগেই জন্ম নেয়া সুপারম্যান নিকোলা টেসলা, যার সব আবিষ্কার ধারণ করতে কিংবা সঠিক মূল্যায়ন করতে তখনকার পৃথিবী তৈরি ছিল না।

কীভাবে হারিয়ে গেলেন টেসলা?
ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে টেসলারের খ্যাতি উল্কার মতোই ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি উদ্ভাবক, প্রকৌশলী ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে সুধী সমাজে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এডিসনের ডিসি কারেন্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি দূরে সরবরাহ করা যেত না, কিন্তু এসি কারেন্ট অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া যেত বলে তা সহজেই ব্যবহার করা যেত। এভাবেই টেসলার জেনারেটরের দিকে আকৃষ্ট হয় বিখ্যাত ইলেকট্রিক অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোং ওয়েস্টিং হাউস। তারা প্রচুর আর্থিক সুবিধা দিয়ে টেসলাকে তাদের সহযোগী করে নেয়। অচিরেই এডিসন, থম্পসন-হিউস্টন এবং ওয়েস্টিং হাউস—এ তিনটি বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ‘বিদ্যুৎযুদ্ধ’।

অন্যান্য বিজ্ঞানীর রোষানলে পড়েন টেসলা। পরবর্তী কয়েক বছরে টেসলা ৩০টির বেশি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেটেন্ট গ্রহণ করেন। যার মধ্যে রয়েছে টেসলা বৈদ্যুতিক অসিলেটর, বিদ্যুতের মিটার, উন্নত প্রযুক্তির নানা ধরনের ইলেকট্রিক বাল্ব, হাই ভোল্টেজ ট্রান্সফরমার ইত্যাদি যন্ত্র। এমনকি নায়াগ্রা জলপ্রপাতের শক্তি ব্যবহার করে ১৮৯৩ সালে পৃথিবীর প্রথম আধুনিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপিত হয় টেসলার হাত ধরেই। তবে টেসলার জীবনের কালো অধ্যায় ১৮৯৫ সাল, যখন তার ল্যাবে আগুন ধরে যায় এবং দীর্ঘ গবেষণার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এতেও থেমে থাকেননি তিনি

তিন শতাধিক আবিষ্কারের প্যাটেন্ট রয়েছে নিকোলা টেসলার, যেগুলো সময়কে ছাপিয়ে গড়েছে আধুনিক বিশ্ব। তিনি এ বিশ্বে আধুনিক যুগ তৈরি করে গেছেন ঠিকই, কিন্তু নিজে কোনো উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। তার আবিষ্কারগুলো কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করে গেছে এবং শত শত মিলিয়নিয়ার তৈরি করে গেছে। অন্যান্য বিজ্ঞানীর সঙ্গে নিকোলা টেসলার পার্থক্য এই যে, তিনি শুধু থিওরিটিক্যালি তার আবিষ্কার প্রকাশ করতেন না; বরং বাস্তবে সেগুলোর প্রয়োগ দেখাতেন। তাকে বলা হয় ‘the wizard of electricity’. পৃথিবী আজ নিকোলা টেসলাকে প্রায় ভুলেই গেছে। কিন্তু আমরা মর্ত্যবাসী আসলে ভাগ্যবান যে এমন একজন জ্ঞানী পৃথিবীতে এসে সবকিছু আলোকিত করে দিয়ে গেছেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech