বিশ্বকাপের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হারের তিক্ততা। অনেকেই পাকিস্তানের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু না, শেষ ভালো যার সব ভালো তার। পাকিস্তান হেঁটেছে সেই রীতিতে। শেষ মুহূর্তে সুযোগ পেয়ে সেটা কাজে লাগিয়ে প্রথমে সেমিফাইনালে উঠেছে। এবার সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল বাবর আজমের দল।
আজ বুধবার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান। মেলবোর্নে আগামী ১৩ নভেম্বর হতে যাওয়া ফাইনালের আরেক প্রতিপক্ষ নির্ধারিত আগামীকাল।
নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে পুরো আসর জুড়ে সমালোচিত ছিলেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। মন্থর ব্যাটিং ও স্ট্রাইক রেট কথা শুনেছেন বারংবার। কিন্তু দুই তারকাই আজ বনে গেলেন পাকিস্তানের ট্রাম্পকার্ড। দুজনে মিলে গড়লেন ১০৫ রানের জুটি। এই জুটিতেই মূলত জয়ের পথ গড়ে ফেলে পাকিস্তান।
মাত্র ১৫৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। ব্যাট হাতে বাবর আজম করেন ৫৩ রান। ৪২ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল সাতটি বাউন্ডারি। রিজওয়ান উপহার দেন ৫৭ রানের আরেকটি চমৎকার ইনিংস। সেই সঙ্গে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন মোহাম্ম হারিস। শান মাসুদ করেন ৩ রান।
এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১৫২ রান তুলছে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেছেন মিচেল। ৩৫ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল তিনটি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা।
সিডনির রানের উইকেটে আজ টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু আগে ব্যাটিংয়ে নেমে কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেনি কিউইরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই নিউজিল্যান্ডকে কাঁপিয়ে শাহিন শাহ আফ্রিদি।
আফ্রিদির করা প্রথম বলটি লং-অন দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান ফিন অ্যালান। পরের বলটিই লেগে যায় প্যাডে। আঙুল তুলে আউট দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে রক্ষা পান অ্যালেন। পরের ওভারে বলে আবারও এলবির ফাঁদে ফেলেন আফ্রিদি। এবার আর রিভিউ নিয়ে রক্ষা পাননি অ্যালেন। ৪ রানেই ওপেনারকে হারায় নিউজিল্যান্ড।
এরপর ডেভন কনওয়ের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন উইলিয়ামসন। কিন্তু সেটাকে স্থায়ী হলো না। রান আউটে কাটা পড়লেন কনওয়ে। ৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড, ২০ বলে ২১ করে ফেরেন কনওয়ে।
জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা না সামলাতেই ফের হোঁচট খায় নিউজিল্যান্ড। কিউইদের বড় ব্যাটার গ্লেন ফিলিপসকে তুলে নেয় নেওয়াজ। ৮ বলে আজ ৬ রান করে বিদায় নেন ফিলিপস।
৪৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। সেই চাপ কাটাতে প্রতিরোধ গড়েন উইলিয়ামসন। মিচেলের সঙ্গে গড়েন ৬৮ রানের জুটি। এই জুটিতে মূলত লড়াইয়ের ভিত গড়ে নিউজিল্যান্ড। ১৭তম ওভারে ফের বল হাতে এসে এই জুটি ভাঙেন আফ্রিদি। তুলে নেন কিউই অধিনায়ককে। ৪২ বলে ৪৬ করে মাঠ ছাড়েন উইলিয়ামসন।
অধিনায়ক ফিরলে শেষ দিকে বাকিদের নিয়ে দলকে মোটামুটি লড়াই করার সংগ্রহ এনে দেন মিচেল। এবার এই ১৫২ রান টপকে যেতে পারলেই বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকেট পেতে পারে বাবর আজমের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৫২/৪ (অ্যালেন ৪, কনওয়ে ২১, উইলিয়ামসন ৪৬, ফিলিপস ৬, মিচেল ৫৩, নিশাম ১৬; আফ্রিদি ৪-০-২৪-২, নেওয়াজ ২-০-১২-১, শাদাব ৪-০-৩৩-০, হারিস ৪-০-৩২-০, নাসিম ৪-০-৩০-০)।
পাকিস্তান : ১৮.১ ওভারে ১৫৩/৩(বাবর ৫৩, রিজওয়ান ৫৭, হারিস ৩০, শান মাসুদ ৩, ইফতেকার ০ ; ইশ শোধি ৪-০-২৬-০, বোল্ট ৪-০-৩৩-২, সাউদি ৩.১-০-২৪-০, স্যান্টনার ৪-০-২৬-১, ফার্গুসন ৪-০-৩৭-০)।
ফল : ৭ উইকেটে জয়ী পাকিস্তান।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মোহাম্মদ রিজওয়ান।