স্পোর্টস ডেস্ক :
ক্রিকেটকে যদি কোনো থ্রিলার মুভির সঙ্গে তুলনা করা হয় তবে পাকিস্তান দল তার সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে প্রায় ছিটকেই পড়ছিল পাকিস্তান। তবে এরপরের ইতিহাস সবার জানা। ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দলটি সব নাটকীয়তাকে হার মানিয়েছে। ভাগ্যের পিঠে চড়ে তারা উঠে আসে সেমিফাইনালে। তারপর শেষ চারের দ্বৈরথে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে এবার ১৯৯২ বিশ্বকাপের পুনঃমঞ্চায়নের অপেক্ষায়।
১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ঠিক একইরকম নড়বড়ে অবস্থা ছিল ইমরান খানের পাকিস্তানের। সেবার ধুঁকতে থাকা দলটি অবিশ্বাস্যভাবে সেমিতে জায়গা করে নেয়। তারপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল জিতেছিল। ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল তারা ইংল্যান্ডকে। সেবার ইংলিশদের হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় পাকিস্তান।
এবার যদিও ফরম্যাটটা ওয়ানডে নয় টি-টোয়েন্টি। তাতে কি! সেমিফাইনালে সেই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাল পাকিস্তানে। তবে ফাইনালেও বিরানব্বইয়ের স্মৃতি ফেরাতে সবার চোখ ছিল দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দিকে। কারণ বৃহস্পতিবারের (১০ নভেম্বর) ম্যাচটিতে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড জিতলেই বিরানব্বই বিশ্বকাপ ফাইনালেরও পুনঃমঞ্চায়ন হবে। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে ঘুরতে বহু বহু বছরে একবার একই সমান্তরালে আসে সবগুলো গ্রহ। পাকিস্তানের সামনেও ত্রিশ বছর পর এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের বড় ব্যবধানের জয়ে ইতিহাসের চূড়ান্ত পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণই যেন কড়া নাড়ছে দলটির সামনে।
বিরানব্বই বিশ্বকাপের ফাইনালে গ্রাহাম গুচের পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নেয় ইমরান খানের পাকিস্তান। নতুন পরিচয় পায় ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম, রমিজ রাজারা। এবার শিরোপা জয়ের পথে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ সেই ইংল্যান্ড। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিরানব্বই বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালও হচ্ছে সেই একই স্টেডিয়াম তথা মেলবোর্নে। যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী রোববার (১৩ নভেম্বর)
অদ্ভুতভাবে মিল-অমিলের এ খেলায় আশ্চর্যরকম সম্পর্ক এ দুই বিশ্ব আসরের। দুটি আসরই পাকিস্তান শুরু করে হার দিয়ে। ৯২-এ প্রথম চার ম্যাচে ছিল সাকল্যে এক জয়। আর এবার প্রথম দুই ম্যাচেই পাকিস্তান ছিল পরাজিতের ঘরে। গ্রুপপর্বে দুই আসরেই ভারতের বিপক্ষে হারে দলটা। এরপর নকআউটে উঠতে তাদের অপেক্ষা ছিল অন্যদের ফলাফলের ওপর। এবারও হয়নি ব্যতিক্রম। নেদারল্যান্ডস রূপকথাতেই যে কপাল খোলে পাকিস্তানের।
সুপার টুয়েলভের শেষ দিনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দেয় পুঁচকে নেদারল্যান্ডস। আর তাতে সেমিফাইনালের সৌভাগ্যের সেই দরজা খুলে যায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সামনে। কার্যত নকআউট ম্যাচে বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় পাকিস্তান। আর তাতে ত্রিশ বছর আগের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সেই সঙ্গে ফাইনালেও উঠে গেছে দল। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলে মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা উৎসব করার কথা বাবর আজমের পাকিস্তানের। সেবার ইমরান খান পেরেছিলেন দলকে শিরোপা জেতাতে। এবার বাবর আজম পারবেন? উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
তবে ইংল্যান্ডও চাইবে বিরানব্বইয়ের শিরোপার স্বপ্নভঙ্গের প্রতিশোধ নিতে। তাহলেই গ্রাহাম গুচদের হয়ে বদলা নেয়ার সুযোগ আসবে জস বাটলারদের সামনে, সেই জগদ্বিখ্যাত এমসিজিতে।