স্পোর্টস ডেস্ক :
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার অধীনে প্রথমবার বিপিএলের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখে সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু উড়তে থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সামনে ফিকে হয়ে গেল সে আশা। মাশরাফীদের হতাশ করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) বিপিএলের ফাইনালে সিলেটকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা। বিপিএলের শিরোপা অনেকটা নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আগে জিতেছিল তিনবার, এবার তাদের শোকেজে উঠেছে চতুর্থ ট্রফি। ঘরোয়া এই টুর্নামেন্টে ঢাকাকে ছাপিয়ে এখন সেরা দল হলো নাফিসা কামালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান তুলেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেছেন মুশফিকুর রহিম।
জবাব দিতে নেমে ৪ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় কুমিল্লা। রান তাড়ায় ঝোড়ো শুরু করে কুমিল্লা। প্রথম ওভারে রুবেলের বলে মাত্র ৫ রান এলেও দ্বিতীয় ওভারে তানজিমকে পিটিয়ে দুই ওভারে স্কোরবোর্ডে ২২ রান তোলে তারা। তৃতীয় ওভারেই এই ঝড় থামান রুবেল। ফিরিয়ে দেন নারিনকে। রুবেলের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন নারিন (১০)। তিনে নামা ইমরুলকে বিদায় করেন জর্জ লিন্ডে।
৩৪ রানে দুই উইকেট হারানো ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় কুমিল্লা। বিপদ থেকে উদ্ধার করে কুমিল্লাকে পথ দেখান লিটন। ৩৯ বলে ৫৫ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে কুমিল্লাকে ম্যাচে ফেরান ডানহাতি এ ওপেনার।
১৩তম ওভারে লিটনের প্রতিরোধও ভাঙেন লিটন। এরপরও ম্যাচ কুমিল্লার পক্ষেই ছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ বোলিং দিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে মাশরাফীর সিলেট। চেষ্টা বিফলে যায়নি। দুই বিদেশি তারকা মঈন ও জনসন উইকেটে থাকার পরও মাশরাফীদের দারুণ ফিল্ডিং পাল্টে দেয় গতিপথ।
শেষ ৪ ওভারে কুমিল্লার সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় ৫২ রানের। কিন্তু উইকেটে থাকা মঈন ও জনসনকে আটকাতে পারেনি সিলেট। দুই বিদেশি তারকাদের ব্যাটে চড়ে কঠিন সমীকরণ সহজেই পাড়ি দেয় কুমিল্লা। ১৯.২ ওভারে তুলে নেয় স্বস্তির জয়। ব্যাট হাতে ১৭ বলে ২৫ রান করেন মঈন। আর জনসন উপহার দেন ৫২ বলে ৭৯ রানের ইনিংস।
মিরপুর শেরেবাংলায় ফাইনালকে ঘিরে নানা আয়োজন রাখে ক্রিকেট বোর্ড। শিরোপা নির্ধারিত ম্যাচের আগে গানে গানে মঞ্চ মাতান শিল্পীরা। এরপর টস জিতে সিলেটকে ব্যাটিংয়ে পাঠান কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
আগে ফিল্ডিংয়ে নামা কুমিল্লার প্রথম ওভারে কাটে এলোমেলো। বোলিং ইনিংস শুরু করেন আন্দ্রে রাসেল। যার প্রথম বলে মিডঅন থেকে ওভারথ্রো-তে চার পেয়ে যান শান্ত। শেষ বলে ফাইন লেগ থেকে তানভীর ইসলামের ওভারথ্রো থেকে আসে আরেকটি চার। এ ছাড়া শান্ত মারেন আরও দুটি বাউন্ডারি। একটি আসে মিড অফের ওপর দিয়ে, আরেকটি মারেন আউটসাইড-এজে থার্ডম্যান দিয়ে। সবমিলিয়ে প্রথম ওভারে সিলেটের স্কোরকার্ডে যোগ হয় ১৮ রান।
এমন দুর্দান্ত শুরুটা অবশ্য ধরে রাখতে পারেনি সিলেট। ঠিক পরের ওভারের প্রথম বলেই তানভীরকে জায়গা বানিয়ে কাট করতে গিয়ে আউট হন তৌহিদ। ছন্দে থাকা তৌহিদ আজ রানের খাতাও খুলতে পারেননি।
আগের ম্যাচের মতো আজও ওয়ানডাউনে মাঠে নামেন অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। কিন্তু টিকতে পারেননি। রাসেলের প্রথম স্পেলের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন মাশরাফী। দলীয় ২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতে ব্যাকফুটে চলে যায় সিলেট।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। শুরুর ধাক্কা সামলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে গড়েন ৭৯ রানের জুটি। এর মধ্যে পাওয়ার প্লেতে আসে ৪২ রান। আর ৩৮ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত।
পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর শান্ত যখন আরও আগ্রাসী হচ্ছিলেন তখন তাঁর ঝড় থামালেন মঈন আলি। ইংলিশ তারকার বল উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে আউট হন শান্ত। ৯ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৪৫ বলে ৬৪ রানে শেষ হয় তাঁর প্রতিরোধ।
শান্তর পর থিতু হওয়ার চেষ্টায় ফেরেন রায়ার্ন বার্ল। মুস্তাফিজের কাটারে পড়ে ১৩ রানে বিদায় নেন তিনি। বার্লের পর একে একে ফেরেন থিসারা পেরেরা-জর্জ লিন্ডে। কিন্তু উইকেটে ততক্ষণে থিতু হয়ে যান মুশফিক। ৩৬ বলে হাফসেঞ্চুরি করা মুশফিক শেষ পর্যন্ত উপহার দেন ৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। ৪৮ বলে যা সাজানো ছিল ৫ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায়। মুশফিকের ব্যাটে চড়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার পুঁজি পায় সিলেট স্ট্রাইকার্স।
যদিও মাঝে কুমিল্লার ক্যাচ মিস সুযোগ করে দিয়েছে সিলেটকে। এক ইনিংসে কুমিল্লা মিস করে পাঁচটি ক্যাচ। লিটন দাস ও মঈন আলিদের ক্যাচ মিসের কারণে সিলেট পায় বড় সংগ্রহ।
বল হাতে কুমিল্লার হয়ে ৩১ রানে দুই উইকেট নেন মুস্তাফিজ। একটি করে নেন রাসেল, মঈন আলি, তানভির ও নারিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট স্ট্রাইকার্স : ২০ ওভারে ১৭৫/৭ (শান্ত ৬৪, তৌহিদ হৃদয় ০, মাশরাফী ১, মুশফিক ৭৪, পেরেরা ০, বার্ল ১৩, জর্জ ৯, জাকির ১, সাকিব ০; মঈন ৪-০-৩১-১, রাসেল ৩-০-৩১-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-২, তানভির ৩-০-২১-১, নারিন ৪-০-৩৩-১)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৯.২ ওভারে ১৭৬/৩ ( লিটন ৫৫, নারিন ১০, ইমরুল ২, জনসন ৭৯ , মঈন ২৫; রুবেল ৪-০-৩৯-২, তানজিম ৪-০-৫০-০, জর্জ ৪-১-১৪-১, উড , পেরেরা ১-০-১২-০, বার্ল ২-০-১৮-০)।
ফল : ৭ উইকেটে জয়ী হয়ে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ।