‘এবারের বিপিএলটা আমরা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করব। টুর্নামেন্ট তার নামেই হবে। সব দলই ঠিক থাকবে, শুধু ম্যানেজমেন্টের অংশ বিসিবি দেখবে। খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক, থাকা-খাওয়া, যাতায়াত সবই বিসিবি তত্ত্বাবধান করবে। এতে আশা করি সবাই খুশি হবে। অনেকটা বিগ ব্যাশের মতো’- গত বুধবার মিডিয়ার সামনে উপস্থিত হয়ে কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বাদ দিয়ে বিসিবির দায়িত্বে বিপিএল আয়োজন করার কারণ হিসেবে তিনি তখন উল্লেখ করেন, ‘আমরা নতুন চুক্তি করতে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বসেছিলাম। কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজির বেশকিছু দাবি-দাওয়া আছে। ওই দাবিগুলো আমাদের মূল কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি দাবি করছে, এক বছরে দুটি বিপিএল তারা চায় না। খেলবে না সেটি অবশ্য বলেনি। ওদের ওপর চাপ বেশি পড়ে যাবে । সবকিছু চিন্তা করে ঠিক করেছি এবারের বিপিএল আমরাই (বিসিবি) চালাব। টুর্নামেন্টটা আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক করছি না।’
কিন্তু বিসিবির এ সিদ্ধান্তটি যেনো ঠিক মানতে পারছে না ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। বিশেষ করে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চেয়ারপারসন নাফিসা কামাল আবেগপ্রবণ হয়ে গেছেন বিসিবির এ সিদ্ধান্তে। বিপিএলের এবারের আসরে তাদের কোনো দল থাকবে না, এটি যেনো ভাবতেই পারছেন না নাফিসা।
তাই তো বিসিবির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংবাদ মাধ্যমে নিজের আনুষ্ঠানিক বার্তা জানাতে গিয়ে বেশ কয়েকবার আবেগী হয়ে পড়েন তিনি এবং লুকোতে পারেন না চোখের জল। তবে বঙ্গবন্ধুকে টুর্নামেন্ট উৎসর্গ করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নাফিসা। একইসঙ্গে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এমন সম্মানজনক আয়োজনের অংশ হিসেবে থাকার ব্যাপারেও।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ‘চেয়ারপারসন নাফিসা কামালের বার্তা’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। যার শুরুতেই দেখা যায় চোখের জল লুকোনোর চেষ্টা করছেন নাফিসা। তবু নিজেকে সামলে নিয়ে প্রায় ৯ মিনিট এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। এর মাঝে বেশ কয়েকবার চোখে হাত দিয়ে জল মোছার চেষ্টা করতে দেখা যায় নাফিসাকে।
নিজের বার্তায় নাফিসা বলেন, ‘এতো সুন্দর ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়ায় বিসিবি এবং বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার বিপিএল তার নামে আয়োজিত হতে যাচ্ছে। এজন্য আমি মন থেকে, আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ও স্বাগত জানাই আমাদের বোর্ড প্রেসিডেন্টকে।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, দেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, পতাকা মানেই বঙ্গবন্ধু। তার নামে এবার বিপিএল হচ্ছে, আমরা তো অবশ্যই চাই যে আমাদের দল নিয়ে আমরাও যেন সে পতাকাটা ওড়াতে পারি। আমরা তো এর বাইরে থাকতে পারি না।
বিপিএলের অন্য সব মালিকদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে পুরনো। অনেক বাধা পেরিয়ে ছয় বছর ধরে আমি বিপিএলে আছি। এতকিছুর পর এবার যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিপিএল আয়োজিত হতে যাচ্ছে, আমি তো এর বাইরে থাকতে চাই না। আমি চাই না যে আমার দল এতো বড় সম্মান থেকে বঞ্চিত হোক। আমি আশা করি, বিসিবি যেনো আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আরও সার্থকভাবে এ টুর্নামেন্টটা আয়োজন করে। আমরা অবশ্যই আমাদের পূর্ণ সহযোগিতার প্রস্তাব দেবো বিসিবিকে।’
এসময় তিনি আরও নানান বিষয়ে কথা বলেন বিসিবির এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে। পুরো বার্তাজুড়েই আবেগপ্রবণ ছিলেন তিনি। টানা ছয় আসর বিপিএলে অংশ নেয়ার পর, এবার বঙ্গবন্ধুর নামে হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে অংশ নিতে না পারার কষ্টটাই যেনো ফুঁটে উঠছিল তার প্রতিটি কথায়।