ভোলায় অবস্থিত সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসচালিত ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাবটি আবারো ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির বৈঠকে এটি উপস্থাপনের কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। শুধু এটি নয়, আরো তিনটি প্রস্তাবও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এখন আবার এই প্রস্তাবটি আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ফের উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের বাইরে থাকায় কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক আজকের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এই বৈঠকে প্রস্তাবটি পাস করিয়ে নেয়ার কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ চতুর্থবারের মতো বাড়ানো হচ্ছে। মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে দুই বছর। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করছে ‘ভেঞ্চার এনার্জি রিসোর্সেস লিমিটেড’। বিদ্যুৎ কেনা বাবদ ভেঞ্চার এনার্জিকে ১৪৮ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে আগামী বছরেই অবসরে পাঠানোর কথা রয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ ২০১৯ সালের ১১ জুলাই শেষ হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’ (বিপিডিবি)-এর সুপারিশ মতে এটি এখনো চালু রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ চতুর্থবারের মতো আরো দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ১১ জুলাই। এ দিকে আগামী বছরই ভাড়াভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। নতুন এ বর্ধিত সময়ের জন্য জ্বালানি সরবরাহসহ ‘ভেঞ্চার এনার্জি রিসোর্সেস’-কে প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা দিতে হবে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি চুক্তি করা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০০৯ সালের ১২ জুলাই থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু করে। সে হিসাবে তিন বছর মেয়াদি ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালের ১১ জুলাই। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর ভোলা অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা বিবেচনায় পরবর্তীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ তিন দফায় (২+২+৩) ৭ বছর বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে গত ১০ বছর ধরে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে।
জানা যায়, অনুষ্ঠেয় ক্রয় কমিটির বৈঠকে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বর্ধিত সময়ে বিদ্যুৎ ক্রয়ের জন্য নতুন ট্যারিফ হারও নির্ধারণ করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে, নতুন মেয়াদে ট্যারিফ হার আগের তুলনায় কমছে। এতে দুই বছরে সরকারের প্রায় ৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাঠানো এ সম্পর্কিত এক সার-সংক্ষেপে বলা হয়, বর্ধিত মেয়াদে ২০১৯ সালের ১২ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ২১ জুন পর্যন্ত ট্যারিফ হার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ৩ টাকা ৭ পয়সা (৩.৮৪ সেন্ট) এবং ২০২০ সালের ২২ জুন থেকে ২০২১ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার প্রায় ২ টাকা ৮০ পয়সা (৩.৪৯৯ সেন্ট) প্রস্তাব করা হয়েছে। ডলার-প্রতি ৮০ টাকা ধরে এ হিসাব করা হয়েছে।
ভোলা অঞ্চলে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পটুয়াখালীর আংশিকসহ ভোলা সদর, বাংলাবাজার ও পরানগঞ্জের চাহিদা প্রায় ৩৫ মেগাওয়াট। এটি সরবরাহ করে ‘ভেঞ্চার এনার্জি রিসোর্সেস লিমিটেড’। নতুন বর্ধিত সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে ৪০ মেগাওয়াটে উন্নীত করবে বলে জানা যায়।
সূত্র জানায়, জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে ভোলা অঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ভোলায় একটি ২৩০/৩৩ কেভি ও ১২০/১৪০ এমভিএ ট্রান্সফরমার স্থাপনে পিজিসিবি ইতোমধ্যে একটি দরপত্র আহবান করেছে। এটি চালু হলে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াই সমগ্র ভোলা অঞ্চলে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।