ঝড়ের কবলে পড়ে ভোলার চরাঞ্চলে গবাদি পশু-পাখির মৃতদেহ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। গত ৭ দিনেও এসব মৃত গবাদি পশু ও পাখি অপসারণ না করায় পচন ধরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্গন্ধের ফলে অতিষ্ট চরাঞ্চলের মানুষ।
শুধু তাই নয়, মৃত পশু-পাখির দুর্গন্ধের কারণে চরাঞ্চলের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে অন্যদিকে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বন্যপ্রাণীর মধ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করাও হচ্ছে। এদিকে, পরিকল্পিত উপায়ে দ্রুত মৃত গবাদি পশুর মরদেহ অপসারণের দাবি জানিয়েছে চরবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, ঝড়ে মৃত গবাদি পশু ও পাখি চরাঞ্চলের বাগানে, রাস্তার পাশে, গভীর জঙ্গলে, ফসলের ক্ষেতে এবং পুকুর-খাল এবং নদীতে ভাসছে। এসব মৃত পশু থেকে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। এতে পরিবেশের ক্ষতিকর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চর শাহজালাল দ্বীপের বাসিন্দা মো. নাসির বলেন, আমাদের চরে ঝড়ে একটি মহিষ, ১০ ছাগল ও ১০ ভেড়া মারা গেছে। সেগুলো বিভিন্ন বাগানে, ফসলের ক্ষেতে এবং পানিতে ভাসছে। মৃত পশু কুকুর-শেয়ালে খাচ্ছে। পথে পথে দুর্গন্ধ, মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৩০টি চরে প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ঢালচর, চর নিজাম, কুকরি-মুকরি, চর মোজাম্মেল, চর নজরুল, চর জহিরুল উদ্দিন, চর হাসিনা, কলাতলীর চর, বদনার চর, চর পিয়াল, চর সামসুদ্দিন, মাঝের চর, মদনপুর, ভেলুমিয়ার চর, চর পাতিলা এবং চর তাড়ুয়ার ক্ষতি বেশি।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসেবে, এসব চরে ৯৪টি গরু, ৯৭টি মহিষ, ৪৫টি ছাগল, ১৭৬টি ভেড়া, ৮ হাজার ১৮৪টি মুরগি এবং ৩ হাজার ৮৪টি হাঁস মারা গেছে।
অন্যদিকে, জোয়ারে ভেসে নিখোঁজের রয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭টি গরু, ৩ হাজার ৬৫৯টি মহিষ, ১১ হাজার ৬১২টি ছাগল, ২৫১টি ভেড়া, ৪০ হাজার ৭৫৯টি মুরগী এবং ১৭ হাজার ১২৩টি হাঁস।
কুকরী-মুকরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বাংলানিউজকে জানান, চর পাতিলার পুরো দ্বীপে অন্তত ১৫-২০টি গরু-মহিষ মারা গেছে। পথে ঘাটে, চরে বা পানিতে ভাসছে মৃত গবাদি পশু। এসব মৃত পশুর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এগুলো দ্রুত অপসারণ করা দরকার।
ঢালচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার জানান, ঝড়ে ঢালচরে অন্তত অর্ধশতাধিক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ১২টি গরু-মহিষ বিভিন্ন এলাকায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মৃত পশু দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা এসব পশু অপসারণে কোনো উদ্যোগ বা পরামর্শ দিচ্ছেন না।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মৃত গবাদি পশু পাখির কারণে আমাদের বনের বন্যপ্রাণির মধ্যে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা খুবই কম। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখছি। তবে এতে পরিবেশের ক্ষতি আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানিও দূষিত হয়ে পড়বে। তাই এসব মৃত পশু অপসারণ জরুরি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল জানান, চরে যেসব গরু-মহিষ, ছাগল এবং পশু-পাখি মারা গেছে, সেগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য আমরা দ্রুত নির্দেশনা দিয়েছি, মৃত পশু মাটি চাপা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের কর্মীরা কাজ করছে। পরিবেশ যাতে দূষিত না হয়, তাই দ্রুত অপসারণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, জেলায় ৩০ চরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ২৬ লাখ। এরমধ্যে মৃত প্রাণির ক্ষতি ১ কোটি ২১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫০ টাকা। বাকি ক্ষতি হয়েছে পশু খাদ্য, খাবার এবং অবকাঠামোর।
তিনি আরও বলেন, চরে যেসব গবাদি পশু এবং নিখোঁজ রয়েছে, তার বেশিরভাগ পাওয়া গেছে, সেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া নিখোঁজের মধ্যে যদি মৃতপশু পাওয়া সেগুলো ক্ষতির তালিকায় আসবে।