বিনোদন ডেস্ক:
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে
তবে একলা চলো রে।
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে
যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে
সবাই করে ভয়-
তবে পরান খুলে ও তুই মুখ ফুটে
তোর মনের কথা একলা বলো রে-
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের কথাগুলো যেন চিত্রনায়িকা মৌসুমীর এখনকার জীবনযাত্রার সঙ্গে একেবারে মিলে গেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২৫ অক্টোবর অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে বেশ আয়োজন করেই নির্বাচনের প্রচার ও প্রচারণায় নেমেছিলেন মৌসুমী। নির্বাচনে দুটি প্যানেলে মিশা-জায়েদ ও মৌসুমী-তায়েব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ভেস্তে যায় মৌসুমী-তায়েব প্যানেল। এক এক করে প্যানেলের সবাই সরে দাঁড়ালে মৌসুমী ‘একলা চলো’ নীতিতে অটল থেকে নির্বাচন করছেন। সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী মৌসুমীকে অভিনয়ের পাশাপাশি এফডিসিতে দেখা গেল নির্বাচনের জনসংযোগ করতে। নন্দনের সঙ্গে আড্ডার শুরুতে তিনি বলেন, ‘অনেক সদস্য মিলে একটি চমক জাগানিয়া প্যানেল তৈরি করেছিলাম আমরা। কিন্তু আড়ালে থেকে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আমাদের ওপর বাধার দেয়াল তৈরি করে। আমার সঙ্গে যাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল, তারা সবাই সরে গেল। একটা সময় দেখলাম, নির্বাচনে আমি একা। কেউ নেই আমার পাশে।’
যারা মৌসুমীকে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে পরামর্শ ও সাহস দিয়েছিলেন তারাই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে মৌসুমীর কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, ‘শিল্পীরা আমার আপনজন। তাদের জন্যই সভাপতি পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সঙ্গে নির্বাচনে যাদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল, তারা ব্যক্তিগত কারণে হয়তো নির্বাচনে আমার সঙ্গ দেয়নি। কিন্তু মানসিকভাবে তারা আমার সঙ্গেই রয়েছেন। প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে আমি কিন্তু একা নই। একটা অদৃশ্য শক্তি চেয়েছিল, সবাইকে বসিয়ে দিলে আমিও নির্বাচন করব না; কিন্তু আমি করছি। কারণ আমার মনে হয়েছে, কাউকে না কাউকে তো একটা সময় প্রতিবাদ করতে হয়।’ পাশের টেবিলে রাখা চায়ের কাপে ছোট্ট চুমুক দিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই মৌসুমী বললেন, ‘আমি জিতি বা হারি এ নিয়ে কোনো কষ্ট থাকবে না। তবে যদি ভালো কিছু করতে হয় তার জন্য আসনের দরকার হয় না। কিন্তু তার পরও কথা বলার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা লাগে। সেজন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সবারই লক্ষ্য থাকে মানুষের কল্যাণ করার, আমারও একই। তবে আলাদা করে বলতে গেলে নির্বাচিত হলে শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করব। অসহায়-দুস্থ শিল্পীদের নিয়ে কিছু করতে চাই। শিল্পীদের নান্দনিকভাবে কাজের মূল্যায়ন করা, তাদের বিপদে পাশে থাকা। আর আমি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী, তাই কাজ করে দেখাতে চাই। শিল্পী সমিতির সমস্যা কী, সেটা আমরা সবাই জানি। নতুন করে বলতে হবে না। আশা করি, এসব সমস্যা আমরা খুব সহজেই মিটিয়ে ফেলতে পারব। কারণ এটা আমাদের পরিবার।’
বর্তমান কমিটি নিয়ে মৌসুমী বলেন, ‘বর্তমান কমিটি নিয়ে কিছুই বলার নেই আমার, তাদের ব্যর্থতা নিয়েও বলতে চাই না। কারণ এ কমিটিতে নির্বাচিত হলেও শুরুতেই পদত্যাগ করেছি। এর বেশি কিছুই এখন বলতে চাই না। সুস্থ চিন্তার পথে অগ্রসর হবো এবং সব শিল্পী ভালো থাকবে- এমনটা হওয়া উচিত। বিগত বছরগুলোতে কী ঘটেছে, সেটা সবাই জানেন। এতটুকু বলতে চাই, আমাদের ভাগ্যের কিন্তু কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আমরা সিনেমার তেমন কোনোই উন্নয়ন ঘটাতে পারিনি।’
এদিকে গত সোমবার এফডিসিতে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে অপমানিত হয়েছেন ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী। মিশা-জায়েদ প্যানেলের সমর্থক বলে পরিচিত ড্যানি রাজ তাকে অপমান করেন। মৌসুমীকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। মৌসুমীর অভিযোগ করেন, ‘প্রচারণার জন্য এফডিসিতে ছিলাম। আমাকে শুভ কামনা জানাতে আমার এক বড় আপা এবং কয়েকজন ভক্ত ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এফডিসিতে আসেন। তারা শিল্পী সমিতির সামনে আমার সঙ্গে সেলফি তুলে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক ওই সময়ে ড্যানি রাজ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করেন। সবার সঙ্গে তিনি বাজে ব্যবহার করেন। একটা হট্টগোল তৈরি করেন। ড্যানি আমাকে চিৎকার করে প্রশ্ন করেন আমি কে? এ সময় সভাপতি মিশা সওদাগরও উপস্থিত ছিলেন। তিনি কিছুই বলেননি। আসলে তারা চাইছেন একটা ঝামেলা বাধাতে। যেন নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়। আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই।’
বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চন তাৎক্ষণিকভাবে প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেখানে ড্যানি রাজ তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। এবারের নির্বাচনে অনেকেই শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দর্শকরা যাদের তারকাশিল্পী বলে মনে করেন, যেমন রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা, পপি, নিপুণ, নিরব, সাইমন সাদিকসহ আরও অনেক তারকা এই নির্বাচনে নেই কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কেউ কেউ বলেছেন, শিল্পী সমিতির পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে, শিল্পী সমিতিতে নোংরামি ঢুকে গেছে। আবার কেউ কেউ সময়ের অভাবের কথা বলেছেন।
‘শেষ পর্যন্ত আমি তো শিল্পী’
সময় পেরিয়ে যায়। তার সঙ্গে পাল্টে যায় সবকিছু। তারপরও থেকে যায় অপরিবর্তিত অনেক কিছু। চিত্রনায়িকা মৌসুমী সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পিছপা হননি। নিজের প্রায় ২৬ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে আজও সেই চিরচেনা মৌসুমীকে দেখা যায়। শুক্রবার বিকেলে এফডিসিতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সবাই টের পেল মৌসুমীর আগমন বার্তা। আর যায় কোথায়। গাড়ি থেকে নামতেই, আরে, এ মৌসুমী না। হ্যাঁ, এই তো মৌসুমী। হাজারো প্রশ্নবাণে বিরক্তির পাশাপাশি মজাও পাচ্ছিলেন মৌসুমী। একসময় ভিড়টা বেড়ে গেল। তাই অনেকটা দর্শকের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচার মতো মেকআপ রুমে যেতে হলো তাকে। ভক্তের ভিড় দেখেই বোঝা যায়, এত বছরেও মৌসুমীর জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। ভক্তের প্রশ্নে বিরক্ত না হয়ে বরং মজা পান মৌসুমী। তাই তো অনেকের সঙ্গে ছবি তুলতেও নেই তার মানা। মৌসুমী বলেন, ‘ভক্তের জন্যই বেঁচে আছি। তাদের ভালোবাসায়ই আজ মৌসুমী হতে পেরেছি।’
নির্বাচনের পাশাপাশি মৌসুমী এখন ব্যস্ত তার অভিনীত নতুন ছবি ‘অর্জন-৭১’এর কাজ নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদানের গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি। মৌসুমী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়কার একটি সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি। এতে আমি অভিনয় করছি ফিরোজা নামের একটি চরিত্রে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটিও আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। মুক্তিযুদ্ধকালীন এ ধরনের চরিত্রে কাজ করাটাও একজন শিল্পীর জন্য সম্মানের।’ আরও অভিনয় করছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, ফজলুর রহমান বাবু, এসএম মহসিন, দিলারা জামান প্রমুখ।
আলোচনায় ব্যক্তিজীবন, পরিবার-সন্তান প্রসঙ্গে মৌসুমীর বক্তব্য, তারকার সব কিছু নজরবন্দী থাকে জানি কিন্তু তার নিজস্ব বলে কিছু আছে সবাই সেটা যদি আরেকটু বুঝত তবে ভালো হত।