ভোলা-ঢাকা রুটে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওয়াটার বাসের দিবা সার্ভিস। আগে যেখানে রাতের আঁধারে লঞ্চে করে ৮ থেকে ১০ ঘন্টায় যাতায়াত করতে হতো, এখন মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘন্টায় দিনের আলোতে ওয়াটার বাসে যাতায়াতের সুযোগ থাকায়, যাত্রীদের চলাচল অনেক সহজ, আরামদায়ক এবং নিরাপদ হয়ে উঠেছে।
দ্রুত গতির ওয়াটার বাসে চলাচলে নৌ-বিহারের আনন্দ পাচ্ছেন যাত্রীরা। মূমুর্ষূ রোগীদের চিকিৎসা এবং মরদেহ পরিবহনেও এসেছে বিশেষ সুযোগ।
দ্বীপজেলা ভোলা থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌ-যান। আর বছরের পর বছর এখানকার মানুষ এই নৌ-যানের উপরই নির্ভরশীল।
এতদিন তারা দিনের প্রথম ভাগ অর্থাৎ দুপুর ২ টার আগে কিংবা সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার পর ঢাকা যেতে পারতেন না। রাতে কুয়াশায় ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকতে হতো। গত মাসে দ্রুত গতির ওয়াটার বাসে গ্রীণ লাইন এবং এ মাসে এডভেঞ্চার চালু হওয়ায় এখন ভোলার মানুষ দিনের বেলায়ও ঢাকায় যেতে পারছেন।
আগে যেখানে রাতের অন্ধকারে শহরের খেয়াঘাট থেকে ১ শত ৫ নটিকেল মাইল নৌ-পথ পাড়ি দিয়ে ৮ থেকে ১০ ঘন্টায় ঢাকায় যেতেন, এখন দিনের আলোতে ইলিশা ঘাট থেকে ৮৪ নটিকেল মাইল পথের দূরত্বের ঢাকায় যেতে পারছেন মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘন্টায়। আসতেও পারছেন। এতে নৌ-পথের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের মাধ্যমে নৌ-বিহারের বাড়তি সুবিধা থাকায় ভোলায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
মূমুর্ষূ রোগীর জরুরী চিকিৎসার জন্য বিনা ভাড়ায় ঢাকা নেয়া এবং ঢাকা থেকে বিনা ভাড়ায় মরদেহ ভোলায় আনারও সুযোগ রয়েছে গ্রীন লাইন ওয়াটার বাসে। এখন জরুরী প্রয়োজনে যাত্রীরা ঢাকায় গিয়ে আবার দিনের মধ্যেই ভোলায় ফিরে আসতে পারছেন। যে কারণে খুব অল্প সময়ে ওয়াটার বাস গ্রীন লাইন এবং এডভেঞ্চার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু ভাড়া কমানোর দাবিও রয়েছে যাত্রীদের।
সাবেক মন্ত্রী মরহুম নাজিউর রহমানের স্ত্রী শেখ রেবা রহমান এর সঙ্গে দেখা হয় গ্রীন লাইনে। সার্ভিস প্রসঙ্গে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, আগে যেরকম মানুষ রাতে উঠতো, ৮/১০ ঘন্টা সময় লাগতো, খুব কষ্ট হতো। এটা যেহেতু ৫ ঘন্টায় যায় সেহেতু মানুষের জন্য অনেক সুবিধা। সরকারি চাকুরিজীবিরা সময় মতো গিয়ে অফিস করতে পারে।
চাকুরি পরীক্ষার্থী মাইনুল বলেন, আগে যখন আমাদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো, তখন আমরা ঠিক মতো যেতে পারতাম না। এই সার্ভিস চালু হওয়াতে আমরা দিনাদিন ঢাকায় যেতে পারছি আগে লঞ্চে আসলে বেশি টাইম লাগতো, সে জন্য দেখা যাইতো আব্বু আম্মু ভোলাতে ঘুরতে আনতে চাইতো না।
এখন সময় কম লাগছে তাই আসতে পারছি। চিকিৎসা প্রত্যাশি মোঃ মোস্তাফিজ বলেন, এখন ঠিক মতো ঢাকায় গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারছি।
গৃহীনি রোকসনা বলেন, এখন আত্মীয় স্বজনের অসুস্থতার খবর পেলে সময় মতো ভোলায় আসতে পারি।
ভোলা পর্যটনের জন্য প্রচার অভিযানের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, গ্রীন লাইন-এডভেঞ্চার চালু হওয়াতে ভোলায় পর্যটনের সংখ্যা বাড়ছে। এধরনের লঞ্চ আরো দরকার।
গ্রীন লাইন ভোলা অফিসের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম রনি বলেন, গ্রীন লাইনে মূমুর্ষূ রোগীদের ভাড়া নেয়া হয় না, ঢাকা থেকে যে কোন মৃতদেহ দুইজন স্বজনসহ বিনা ভাড়ায় ভোলায় আনি, প্রয়োজনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি।
তবে কোন প্রকার পরিকল্পনা ছাড়া তরিঘড়ি করে ইলিশা ঘাট থেকে দিনের বেলায় অত্যাধুনিক ওয়াটার বাস চালু হলেও এসব বাসকেন্দ্রিক প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইলিশা ঘাটে মান সম্মত পন্টুন নেই। নেই গ্যাংওয়ে, জেটি, যাত্রি ছাউনি ও টয়লেট ব্যবস্থা। নদী তীরে ব্লক থাকায় পন্টুনে ঠিকমত ওয়াটার বাস ভীড়তে পারছেনা।
এছাড়া গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধাও নেই ইলিশা ঘাটে। তবে ভোলা নদী বন্দর এর সহকারি পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, যাত্রী সাধারণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বি.আই.ডব্লিও.টিএ একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এতে যাত্রী ছাউনি বিশ্রামাগার এবং টয়লেট ব্যবস্থাসহ যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা থাকবে। প্রকল্পটি অতি সত্বর বাস্তবায়িত হবে।
ভোলা জেলার ৭ উপজেলার ২১টি লঞ্চ ঘাট থেকে প্রতিদিন ২৮টি লঞ্চে করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার যাত্রী ঢাকা-ভোলা রুটে চলাচল করে।