স্পোর্টস ডেস্ক :
বাংলার একটা বিশাল পরিবর্তন এনেছেন সাকিব। আজ থেকে ১০ বছর আগেও পাড়ার অলিগলিতে ব্যাট-বল হাতে কেউ চাইতো শচীন টেন্ডুলকার হতে, কেউ চাইতো মুরালিধরনের মতো রাঙা চোখের শান্ত দানব হতে, কারও স্বপ্নপুরুষ ছিলেন অলরাউন্ডারদের অন্যতম আদর্শ জ্যাক ক্যালিস। এক দশক পর এখন সবার স্বপ্ন এক জায়গায় এসে মিলেছে। সবাই শুধুই সাকিব হতে চায়। ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে, শুধু একজনই। তার চেয়েও বড় কথা, আমরা পেয়েছি নিজেদের একজনকে। স্বপ্ন দেখতে দূর দেশে পাড়ি জমাতে হয় না। ‘মিরাকল অব মাগুরা’- খ্যাত সাকিবের সবচেয়ে বড় মিরাকল বোধহয় এটিই!
সাকিব আল হাসান। বাংলার ক্রিকেটের ব্যাড বয়। ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাড বয়দের নিয়ে ভয় থাকে৷ সাফল্য আর পরিচিতির ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা চেপে ধরে তাদের ঘিরে। আর সবকিছুর মতো এখানেও সাকিব ব্যতিক্রম। বাংলার ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব। অবিসংবাদিত মহারাজ। তবু মাঝেমধ্যে তাকে মনে হয় নিঃসঙ্গ গ্রহচারী।
মাগুরার সাকিব কখন যে পুরো দেশের হয়ে গেলেন, টেরই পাওয়া যায়নি। ক্রিস গেইলকে বলা হয় ইউনিভার্স বস। বিশ্ব ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা হয়ে আনন্দ দিয়েছেন সবাইকে। সাকিব এখনও দিয়ে চলছেন বাংলার ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা হয়ে। বিশ্ব ক্রিকেটের কোথাও যখন শোনা যায় বাংলাদেশ থেকে একজন খেলছেন, আমরা বুঝে যাই তিনি আর কেউ নন, ৭৫ নম্বর জার্সির ওই রাগী ছেলেটা।
সাম্প্রতিক নানা কাণ্ডে সাকিব বিতর্কিত হয়েছেন৷ তা তিনি বরাবরই বিতর্কিত। সাকিব ও বিতর্ক বোধহয় একটা রেললাইনে দুটি পাত, যারা আলাদা তবু একসঙ্গে। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নায়ক সাকিব তাই সবচেয়ে বড় ভিলেনও। তাতে অবশ্য তিনি নির্বিকার। বিতর্কের মুখেই নিজের সেরাটা বের করে আনেন তিনি। ভক্তরাও ভুলে যান সবকিছু। অনেকটা সার্ফএক্সেলের বিখ্যাত সেই সংলাপের মতো, দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, দাগই ভালো। মানুষতো তাকেই শাসায়, অনধিকার চর্চায় আগলে রাখতে চায়, যাকে খুব বেশিই ভালোবাসে। সর্বশেষ বিশ্বকাপ বাদে সাকিব তার সমালোচনার জবাব বরবারই সবুজ ঘাসে দিয়ে এসেছেন৷ মানুষ বলেই কি না, কখনও কখনও ক্লান্ত হন!
বাংলা ব্যান্ড সংগীতের প্রয়াত কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে গান বেঁধেছিল ভাইকিংস ব্যান্ড…
‘যদি হুট করে একা হওয়া যেত আকাশের মতো
আমি চুপ করে চোখে জল নিতাম ইচ্ছে যতো!’
আকাশের দিকে তাকিয়ে সাকিবও কি মাঝে মাঝে ভাবেন একা হওয়ার কথা? হয়ত ভাবেন! অভিমান ঘিরে ধরে তখন। কিন্তু, তিনি থামেন না। প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে ফের নেমে পড়েন। সাকিব বাংলার ক্রিকেটের হৃদযন্ত্র, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জীবনের কারখানায় সাকিব নামক মেশিনের বয়স হয়ে গেছে কাঁটায় কাঁটায় ৩৭। অথচ এখনও তার অহম কী দুর্দান্ত।
আচ্ছা, সাকিব কে? প্রশ্নটা কেমন অদ্ভুত ঠেকছে? এবার উত্তর মেলান। হিমশিম খাবেন। সাকিবকে এক উপমায় আটকে রাখা অসম্ভব বলেই এমন প্রশ্ন! ২৪ মার্চ ১৯৮৭, মাগুরায় জন্ম নেওয়া সাকিব যেদিন পৃথিবীতে এলেন, যেদিন খন্দকার সাকিব আল হাসান ফয়সাল থেকে সাকিব আল হাসান হলেন, যেদিন আরও ছোট হয়ে সবার ময়না হলেন, সেদিন থেকেই তিনি গেয়ে চলেছেন ব্যাট আর বলের মায়াবী ঝংকার তুলে। বাইশ গজের সবুজ ক্যানভাসে আনন্দের কালিতে এঁকে দিয়েছেন এক মহারাজের ছবি, যা তিনি নিজেই! আজ সেই মহারাজের জন্মদিন, যাকে ঘিরে তৈরি হয় আনন্দ, উৎসব আর হাসিমুখ।